গুগল কোর আপডেট ২০২৫: সহজভাবে জানুন কী কী বদলেছে
লেখক: মোঃ আহসান
গুগল কোর আপডেট যখনই কোর আপডেট আনে, তখন অনেকেই ধরে নেন—এটা বুঝি খুব জটিল কিছু।
আসলে বিষয়টি সহজভাবে বলা যায়—এই আপডেট হলো গুগলের নিজস্ব পরিশোধন প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে গুগল নির্ধারণ করে কোন ওয়েবসাইটগুলো আসলে মানসম্পন্ন এবং কোনগুলো নয়।
গুগল কোর আপডেট কী?
ধরুন, গুগল হলো একটি বিশাল লাইব্রেরি।
এখানে গুগলের অ্যালগরিদম হচ্ছে সেই লাইব্রেরিয়ান, যিনি আপনার দরকারি “বই” (ওয়েবসাইট) খুঁজে দেন।
আপনি কিছু সার্চ করলে, অ্যালগরিদম লাখো ওয়েবসাইটের মধ্য থেকে সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক, নির্ভরযোগ্য এবং দরকারি তথ্য আপনার সামনে উপস্থাপন করে।
কোর আপডেট মানে এই লাইব্রেরি আবার নতুন করে সাজানো।
যে ওয়েবসাইট আগে সামনের সারিতে ছিল, আপডেটের পর সেটা পেছনে যেতে পারে—আবার নতুন কোনো মানসম্পন্ন কনটেন্ট সামনে চলে আসতে পারে।
২০২৫ সালের মার্চ কোর আপডেটে কী বদল এসেছে?
২০২৫ সালের মার্চের আপডেটটি ছিল অনেক বড় এবং ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।
মূলত দুটি দিককে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে:
- কনটেন্টের গুণমান
- স্প্যাম প্রতিরোধ
১. কাজের কনটেন্ট এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
আগে গুগলের আলাদা ‘হেল্পফুল কনটেন্ট সিস্টেম’ ছিল দুর্বল লেখা শনাক্ত করার জন্য।
এখন সেটিই কোর আপডেটের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
আপনার লেখা দেখতে যতই ভালো হোক, যদি সেটা খুব সাধারণ হয় কিংবা নতুন কিছু শেখায় না—তাহলে র্যাঙ্কিংয়ে পিছিয়ে যাবে।
গুগল এখন যেসব বিষয় দেখে:
- লেখাটি কোনো সমস্যার সমাধান দিচ্ছে কি না
- লেখক বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছেন কি না
- কনটেন্ট আসলে পাঠকের জন্য, নাকি শুধু র্যাঙ্ক বাড়ানোর জন্য
২. স্প্যাম ঠেকাতে নতুন কড়া নিয়ম
গুগল এবার নিচের তিন ধরনের অসততা চিহ্নিত করে কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছে:
-
Site Reputation Abuse
অন্য কোনো জনপ্রিয় ওয়েবসাইটের নাম ভাঙিয়ে নিজের মানহীন কনটেন্ট ছড়ানো।
-
Parasite SEO
টাকা বা অন্য সুবিধা দিয়ে বড় ওয়েবসাইটে নিজের স্প্যাম কনটেন্ট ঢোকানো।
-
Expired Domain Abuse
পুরনো ভালো মানের ডোমেইন কিনে সেখানে স্প্যাম কনটেন্ট পোস্ট করে র্যাঙ্ক বাড়ানোর চেষ্টা।
গুগল এখন E-E-A-T মডেল অনুসরণ করছে
গুগল কনটেন্ট মূল্যায়নে নিচের চারটি বিষয় বিবেচনা করে, যাকে বলে E-E-A-T:
- Experience (অভিজ্ঞতা): লেখক নিজে বিষয়টি নিয়ে কাজ করেছেন কিনা
- Expertise (দক্ষতা): লেখকের বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান কতটা গভীর
- Authoritativeness (কর্তৃত্ব): লেখক বা সাইট কতটা নির্ভরযোগ্য
- Trustworthiness (বিশ্বাসযোগ্যতা): তথ্য কতটা সত্য, যাচাইযোগ্য ও নিরাপদ
এই চারটি মানদণ্ড পূরণ করলে কনটেন্ট গুগলের চোখে বেশি মূল্যবান হয়ে ওঠে।
আপনি কী করবেন?
- মানুষের জন্য লিখুন, শুধু সার্চ ইঞ্জিনের জন্য নয়
- নিজের পরিচয় দিন—লেখক কে, কেন লিখেছেন
- দুর্বল, অনুপযোগী লেখা সরিয়ে দিন
- ওয়েবসাইট দ্রুতগতির, মোবাইল-ফ্রেন্ডলি এবং ইউজার ফ্রেন্ডলি রাখুন
- একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর দক্ষতা গড়ে তুলুন (Topical Authority)
যা করা একদম উচিত নয়
- AI দিয়ে অল্প সময়ে মানহীন লেখা তৈরি করে পোস্ট দেওয়া
- বড় সাইটের নাম ব্যবহার করে নিজের কনটেন্ট র্যাঙ্ক করানো
- শুধু কিওয়ার্ড গুঁজে লেখা তৈরি করা
- ভুল/বিভ্রান্তিকর শিরোনাম দেওয়া
- পুরনো ডোমেইন কিনে সেখানে স্প্যাম কনটেন্ট পোস্ট করা
জুন/জুলাই ২০২৫ কোর আপডেট: আরও কঠোর পদক্ষেপ
এই আপডেটটি মার্চের চেয়েও কঠোর ছিল।
এখানে গুগল কয়েকটি বিষয়ের উপর কঠোর নজরদারি করছে:
- Thin Content বাদ পড়ছে:
যেসব কনটেন্ট পাতলা, পুরনো বা তথ্যহীন—তা র্যাঙ্ক হারাচ্ছে বা পুরোপুরি বাদ যাচ্ছে। - AI-তৈরি কনটেন্টে বাড়তি যাচাই:
যদি লেখায় মানবিক স্পর্শ বা বাস্তব অভিজ্ঞতা না থাকে, গুগল সেটা নিচে নামিয়ে দিচ্ছে। - UGC (User Generated Content) এর গুরুত্ব:
Reddit বা ফোরামের মত প্ল্যাটফর্মে ব্যবহারকারীদের মতামত এখন গুগলের কাছে অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য।
SEO এক্সপার্ট ও কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের করণীয়
- ধৈর্য ধরুন—র্যাঙ্ক উঠানামা করবেই
- Content Audit করুন—লেখা আসলেই কাজে আসছে কিনা যাচাই করুন
- বাস্তব অভিজ্ঞতা ও দৃষ্টিভঙ্গি যুক্ত করুন
- নিজের ব্র্যান্ড তৈরি করুন—আপনাকে মানুষ বিশ্বাস করবে এমনভাবে নিজেকে গড়ে তুলুন
আমার মতামতঃ
এই কোর আপডেট আমাদের শেখায়,
SEO এখন আর ট্রিকস বা কৌশলের খেলা নয়।
গুগল চায় এমন কনটেন্ট—
- যা মানুষ পড়লে উপকার পায়
- যা সত্যি কিছু শেখায়
- যা পাঠকের সময়ের মূল্য দেয়
তাই লক্ষ্য রাখুন:
আপনার কনটেন্ট তৈরি হচ্ছে মানুষের জন্য, নাকি শুধু সার্চ র্যাঙ্কিংয়ের জন্য?
গুগল এখন ভালো, মানবিক ও দরকারি কনটেন্টকেই পুরস্কৃত করছে।
মীর ইয়াজ মাহমুদ
ডিজিটাল মার্কেটার | SEO ও কনটেন্ট স্ট্র্যাটেজি এক্সপার্ট
Website | LinkedIn